ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় বন্যা পরিস্থিরি অবনিত, পেকুয়ার সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, ৫ ইউনিয়ন প্লাবিত, ৩০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধী

1(1)রিয়াজ উদ্দিন, পেকুয়া :::

পেকুয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পাহাড়ী ঢলে ও মাতামুহুরী নদীর পানি ঢুকে, টানা বৃষ্টির কারনে পেকুয়ার সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ গত তিন দিন ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একইভাবে গত তিন দিন ধরে পেকুয়ায় পল্লী বিদ্যুতের দেখা নেই। পাউবোর নিয়ন্ত্রনাধীন তিনটি ইউনিয়নে ভেঙ্গে যাওয়ায় কমপক্ষে ৩০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।

উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়নে সালাহ উদ্দিন ব্রীজের উত্তরদিকে বেড়িবাঁধের দু’পয়েন্টে ভেঙ্গে যাওয়ায় নতুন ভাবে আরো নতুনভাবে ৮ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেগুলো হল: পেকুয়া সদর ইউনিয়নের নন্দীরপাড়া, পূর্বমেহেরনামা, হরিণাফাড়ি, বলির পাড়া, মোরারপাড়া, সৈকতপাড়া, ছৈড়ভাঙ্গা, তেলিয়াকাটা প্লাবিত হয়েছে। এ দিকে পূর্ব মেহেরনামা এলাকায় পাউবোর বেড়িবাঁধ মাতামুহুরী নদীর বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বেড়িবাঁধে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।

পেকুয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহের নেতৃত্বে ওই ফাটল বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। অপরদিকে শিলখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল হোসাইন জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের তোড়ে ইউনিয়নের পেঠানমাতবরপাড়া, হাজিরঘোনা, দোকানপাড়াসহ প্রায় ৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে যায়। উজানটিয়া ইউনিয়নের দু’পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। এতে করে উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের পূর্ব উজানটিয়ার বিপুল এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানির আঘাতে উজানটিয়া ইউনিয়নের পূর্ব উজানটিয়া গোদারপাড়া ষ্টেশনের অদূরবর্তী স্থানে দুটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। গত ২৪ জুলাই দুপুরে গোদারপাড় কমিউনিটি ক্লিনিক সংলগ্ন স্থানে মাতামুহুরী নদী পয়েন্টে পৃথক বেড়িবাঁধের দুটি পয়েন্ট বিলীন হয়। বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন অংশ দিয়ে মাতামুহুরী নদীর পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে করে গতকাল দুপুর থেকে এই ইউনিয়নের পূর্ব উজানটিয়ার সুতাচোরা, গোদারপাড়া, দক্ষিন সুন্দরীপাড়া, নুরীর পাড়া, রুপালীবাজার পাড়া, দক্ষিন সুতাচুরা, মালেকপাড়া, ঠান্ডার পাড়া, আতরআলী পাড়াসহ বিপুল এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।

উজানটিয়া ইউপির চেয়ারম্যান এম, শহিদুল ইসলাম বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি জানান, গোদারপাড় সংশ্লিস্ট পাউবোর বেড়িবাঁধ পূর্ব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। জানমালের ক্ষতি লাঘব করতে বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত এ অংশটি সংস্কার করতে আমি পাউবোকে পূর্ব থেকেই অবহিত করেছি। পাউবোর এসও গিয়াস উদ্দিন  উজানটিয়ায় এসেছিলেন। তার উপস্থিতিতে বেড়িবাঁধের দুটি অংশ বিলীন হয়েছে। এ দিকে প্রবল বর্ষনে পেকুয়ার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বৃস্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে উপজেলার শিলখালী, বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়নের বিপুল এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পাহাড়ী ঢলের পানি উজানের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে মাতামুহুরী নদীসহ শাখা নদীগুলিতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে উপজেলার প্রধান সড়ক চকরিয়া-মগনামা সড়কের প্রায় ২ কিলোমিটার পানিতে তলিয়ে গেছে।

চকরিয়া-পহরচান্দা সীমান্ত ব্রীজ থেকে শিলখালী ইউনিয়নের হাজিরঘোনা সালাহ উদ্দিন ব্রীজ পর্যন্ত সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে গত দুই দিন ধরে। উজানটিয়া ইউনিয়নের বিপুল এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বেড়িবাঁধ বিলীন হওয়ায় এ ইউনিয়নের শত শত বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। গ্রামীণ অবকাঠামো পানিতে তলিয়ে গেছে। গোদারপাড়ার সাথে সোনালী বাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিস্টান পানিতে তলিয়ে গেছে। চিংড়ি ঘের ও মৎস্যখামার পানির তোড়ে ভেসে গেছে। ফসল ও বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে।

 সোমবার দুপুরে বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন অংশ পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা গেছে কক্সবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রিত পূর্ব উজানটিয়ার গোদারপাড় এলাকায় পৃথক দুটি স্থানে প্রায় তিন চেইন বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। মাতামুহুরীর নদীর প্রচন্ড ¯্রােতের আঘাতে বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়। এ দিকে উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নেও পৃথক স্থানে বেড়িবাঁধের ৫ টি অংশ বিলীন হয়েছে।  দুপুরে জোয়ারের সময় ¯্রােতের আঘাতে বেড়িবাধঁ ভেঙ্গে যায়। ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর জানায়, রাজাখালী ইউনিয়নের নতুনঘোনা হানিফ মিয়ার কাচারীর দক্ষিন পাশের্^, মাতবরপাড়ার ও বাখালী অংশে পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। এ সময় ওই ইউনিয়নের ৪ টি ওয়ার্ড পানিতে তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়েছে।

অপরদিকে বারবাকিয়া ইউনিয়নে ও টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারনে ইউনিয়নের ১নং, ২নং,৩ নং, ৪ নং ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। বারবাকিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলম জানান, আমার ইউনিয়নের ভারুয়াখালী, বারাইয়াকাটা, বুধামাঝিরঘোনা, নাজিরপাড়াসহ প্রায় ৬ টি গ্রামের মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। ওই এলাকার রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিস্টান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পাহাড়ী ঢলের পানি ও টানা বৃষ্টির কারনে ওই এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে চেয়ারম্যান জানান।

পাঠকের মতামত: